Ambassador
View Question 2973 views
Subject : হবিগঞ্জ অাধুনিক সদর হাসপাতাল: আইন যেন কাগজের বান্ডিলে বন্দি হয়ে পড়ে আছে
Written By : Muhammad Jahir Miah Talukdar
আস সালামু আলাইকুম , মাননীয় সংসদ সদস্য আমরা আপনার যোগ্য নেতৃত্বে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে এগিয়ে যাচ্ছি । মাননীয় প্রধান মন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বাংলাদেশের আর্ত সামাজিক শিক্ষা চিকিৎসায় উন্নয়ন ঘটিয়ে আজ আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উঠে এসেছি। আপনার মত মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়গণ কাজ করে যাচ্ছেন তাই আজ বাংলার মানুষ সুখে শান্তিকে আছে । মাননীয় সংসদ সদস্য আধুনিক সদর হাসপাতাল এর সেবার মান নিয়ে আমার কিছু কথা আপনার বরাবর পেশ করতে চাই। ১৪ মে প্রতিদিনের মত ই অফিসে যাই।দৈনন্দিন রুটিন কাজ করি। পড়ন্ত বিকেলে বাসা থেকে ফোন আসে। সেটা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে আমার বড় মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে। তাড়াতাড়ি ফিরে আসার আশ্বাস দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।আবার ও কাজে মন দিলাম। কিভাবে যে ঘড়ির কাটা পাঁচটার ঘর অতিক্রম করল টেরই পেলাম না। আবার ও মোবাইল ফোন টা বেজে উঠলো।এবার কান্নাজড়ানো সুর মিশ্রিত মেয়ের মা’র কণ্ঠ ভেসে আসলো।বাসার ফেরার তাগিদ।গুরুতর কোন কিছু না হলে এরকম কণ্ঠ কদাচিৎ শোনা যায় ।তারপর ও আরো কিছুসময় অফিসের গন্ডিতে কাটিয়ে যখন উঠবো তখন আবারো আমার বড় মেয়ের ফোন । এবার বাঁধ ভাঙ্গা কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্রুত আসার আহবান।তার মা খুব অসুস্থ। এবার নড়েচড়ে উঠলাম। মোটরসাইকেল ঝড়োবেগে চালাতে শুরু করলাম।শন শন হাওয়া বইছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।হাওয়ার বেগ অতিক্রম করে মনে ছুটে চলে যায় ঘরের পানে।আবার মাঝে মধ্যে মনের কোণে অন্য আশংকা জেগে উঠছে। ইদানিং তার শরীরটা সত্যি ভাল যাচ্ছে না।মাঝে মধ্যে হেসে উড়িয়ে দিলে ও মনের মাঝে আচমকা চিন্তার বলি রেখা জেগে উঠে।দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাসায় ফিরেই অবস্থা দেখে তো চোখ দুটো কপালে উঠে গেল। প্রচন্ডব ব্যথায় সে একেবারে দলামছা হয়ে যাচ্ছে। বাচ্ছাদের চোখ টলমল করছে মায়ের কষ্ট দেখে।সিদ্ধান্ত নিলাম হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে। বের হলাম। পাশেই ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বারে বসা আছেন।জরুরীভিত্তিতে রোগী দেখাতে চাইলে সিরিয়াল ভাঙ্গার অযুহাত দেখিয়ে তা আর করতে দেওয়া হলো না।সিরিয়াল নিলাম তবে কমপক্ষে তিন ঘন্টা সময় অপেক্ষা করতে হবে।এত সময় দেওয়ার মতো সময় আমার কাছে নাই। অগত্যা সরকারি হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হলাম। আধুনিক সদর হাসপাতাল , হবিগঞ্জ এর জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলাম।বিশ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার রোগীকে ভর্তি করার জন্য লিখে দিলেন।গাইনী ওয়ার্ডে নিয়ে গেলাম। কোন সাধারণ সিট খালি নাই। আয়া আমাকে পেইং বেড দেখিয়ে দিয়ে আমার সম্মতি জানতে চাইলেন। রোগী নিয়ে আসলাম। গাইনী ওয়ার্ডে ঢুকার সময় ই ডান দিকে কেবিন রয়েছে।কিছুক্ষণ পর কেবিনে নিয়ে আসলাম। কেবিনের দরজার উপর বড় করে লেখা আছে “প্রতিদিন ৩২৫ টাকা ভাড়া, একসাথে এক সপ্তাহের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে”। আমি অগ্রিম পরিশোধ না করেই রোগীকে কেবিনে নিয়ে উঠলাম। রোগী রিসিভ করার সময় কর্তব্যরত নার্স আমার হাতে একটা স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে এগুলো কিনে আনতে বললেন।হসপিটালের স্টক থেকে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি স্টকে নাই বলে জানান। রোগী আমার, ক্ষতি হলে আমার হবে। এ অসময়ে আর তর্কে জড়াতে চাইলাম না।তাড়াতাড়ি বাইরের ফার্মেসি থেকে সেলাইন, ইনজেকশন, ব্যান্ডেজ, ডিসপজেবল সিরিঞ্জসহ যা যা লাগে সব কিনে এনে দিলাম। প্রায় দেড় হাজার টাকার ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি প্রথম ধাপেই কিনতে হলো। কিছুক্ষণ পর ওয়ার্ডে ডাক্তার আসলেন। একজন নার্সের কাছ থেকে পরিচয় নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে রোগীর অবস্থা খোলে বলতেই তিন তাৎক্ষণিক লেবার ওয়ার্ডের টেবিলে রোগীকে নিয়ে আসার জন্য বল্লেন।বোর্ডে লেখা ডাক্তার এস.কে. ঘোষ।দুই একজনের কাছে উনার যথেষ্ট সুনাম শোনতে পেলাম।কাজেও এর ব্যতিক্রম দেখলাম না। ডাক্তার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিলেন আগামী কাল সকালে অচেতন করে অপারেন করবেন।আমি রোগীকে বেডে নিয়ে আসলাম । মনে মনে চিন্তা করলাম একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আইনে যে টুকু চিকিৎসা সুবিধা আমার বা আমার পরিবারের সদস্যগণ পাওয়ার কথা সেটা আজ পাওয়া যায় কি না চেষ্টা করে দেখব। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স কে বললাম সরকার কোটি কোটি টাকার ঔষধ ক্রয়করছে রোগীদের মাঝে বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য আর আপনার বলতেছেন স্টকে নাই। উনার সহজ উত্তর সকল রোগীই বাইরে থেকে ঔষধ ক্রয় করে নিয়ে আসে । উনার যুক্তি হচ্ছে সিট আছে পঁচিশটা রোগী হচ্ছে দিগুণ ঔষধ তো সকলকে দেওয়া যাবে না। আমি বল্লাম পঁচিশজন লোককেই দেন । তা ও তো দিচ্ছেন না। তাহলে ? তিনি একেতারে চুপচাপ হয়ে গেলেন। বুঝলাম উত্তর দেওয়ার জায়গা তার নেই । আমি একজন করপ্রদানকারী হিসেবে আমার করের টাকাটা সরকার কোথায় কি ভাবে খরচ করছে তা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জানার অধিকার আমার আছে।সরকারি হাসপাতালে যেরকম সেবা পাওয়ার কথা আমি কি তা নিশ্চিত ভাবে পাচ্ছি ? সেটা জানার ও খোঁজ খবর নেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। আমি মনে মনে স্থির করলাম হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর একটা চিঠি লিখবো আইন অনুসারে যাতে আমার স্ত্রী বিনা খরচায় চিকিৎসা সেবা ও ঔষধপত্র সহ সব কিছু হাসপাতাল থেকে পান। পরের দিন সকালে হাসপাতালের তত্তাবধায়কের কক্ষে গিয়ে চিঠিটা উনার কাছে দিতেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন । তার কাছে সরাসরি চিঠি দেওয়াটা মনে হলো আমি অন্যায় করে ফেলিছি। কি করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বললেন আপনার স্ত্রী এ সুবিধা পাবেন না। আমি তখন সরকারি চাকুরীজীবীদের জন্য ‘চিকিৎসা সুবিধা বিধিমালা ,১৯৭৪’ এর কথা বলতেই তিনি বললেন আপনি পেতে পারেন। আমি বললাম পরিবারের সদস্য বলতে স্বামী, স্ত্রী, বাবা,মা, ছেলে, মেয়ে, অবিবাহিত ভাই বোন সেটা তো আপনার জানা থাকার কথা। তারপর বললেন আপনার স্ত্রী আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী হিসেবে হয় তো সেবা পেতে পারেন। যাক, কেবিন ভাড়া মওকুপ করার কথা বলতেই বললেন কেবিন কি পাওয়া যাবে ? খালি আছে ? এতে মনে হলো কেবিন ভাড়া হয়তো দিতে হবে না। আমি বললাম আমার রোগী তো কেবিনেই আছে। তিনি তাৎক্ষনিক বলে উঠলেন তাহলে আপনাকে ভাড়া দিতে হবে। আপনার চিঠি আপনি দিলে হবে না , আপনার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ লিখবে, না হলে আমরা কেমনে বুঝবো আপনি সরকারি কর্মকর্তা ? আমি বললাম আমার অফিসের প্যাডে তো লিখলাম। আপনি প্রয়োজনে বেরিফাই করতে পারেন। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের চিঠিই লাগবে। আমি ও দেখতে চাই কতদূর কি হয়। হবিগঞ্জ পিটিআই এ চলে এলাম। সুপারিনটেনডেন্ট স্যার কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতেই তিনি তাৎক্ষণিক একটা চিঠি করে স্বাক্ষর করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। এদিকে আমার রোগী অপারেশন থিয়েটারে চলে গেছে। অভিভাবক হিসেবে আমার স্বাক্ষর লাগবে । বার বার ফোন আসতেছে। আমি দ্রুত হাসপাতালে গেলাম।একেবারে অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে চলে গেলাম। পরে বের হয়ে এসে স্বাক্ষর দিলাম। নার্স আমাকে এক হাজার টাকা দিতে বললেন । আমি চিঠি দেখিয়ে বললাম আপনাদের তত্ত্বাবধায়ক সাহেবের সাথে দেখা করে তারপর দিব। আমি আবাসিক মেডিকেল অফিসারের কাছে গেলাম। কারণ চিঠির প্রাপক তিনি। চিঠি পড়ে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। পরে ইংরেজিতে ফরয়ার্ডেড লিখে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে হাজির হলাম। উনি টিলিফোনে লম্বা কথা বলছিলেন।কথা শেষ করে পারিবারিক কথা ও টিএন্ডটি ফোন থেকে সেড়ে নিলেন।বলা দরকার তিনি আমার প্রথম চিঠি রাখতেই চাননি। আমি উনার অফিস সহকারীর কাছে দিয়ে রিসিভ নিয়েছিলাম। আমি যখন বাইরে ছিলাম তখন তার দপ্তরে আমাকে ডেকে পাঠান। আমি না গিয়ে আমার নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষের চিঠিসহ হাজির হলাম। তিনি চিঠি হাতে নিয়ে বললেন প্রত্যয়ন কোথায়? আমি বললামএটা তো সরকারি চিঠি, আর কি প্রত্যয়নের কোন দরকার আছে? তিনি বলে উঠলেন আপনি এবং আপনার সুপার সাহেব আইনই জানেন না। পরক্ষণেই তিনি তার অফিস সহকারীকে বললেন উনি কি এভাবে বিনা ভাড়ায় কেবিন পেতে পারেন ? আমি তো অবাক । একজন ক্যাডার অফিসার অন্যকে অজ্ঞ বলে ই নিজে কেরানির কাছে আইন জানতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।পড়ে তিনি বললেন আপনার স্ত্রীর প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়ন লাগবে। আমি বললাম সরকারি চিঠির চেয়ে বেসরকারি অফিসের অফিস প্রধানের প্রত্যয়ন কি খুব বেশী প্রয়োজন আছে? তিনি তার ব্যস্ততার কথা বলে আমাকে তার অফিস থেকে যেতে বললেন। একজন উচু ধরের ক্যাডার অফিসার, যে কিনা তার চাকরী সংক্রান্ত বা তার কাছে কে কে কি সেবা পেতে পারে তা জানার কথা কিন্তু সে ব্যাপারে তিনি যে খুব বেশী জানেন তা মনে হলো না। যদি নাই জানেন তাহলে মানবেন কি করে। ওটি চার্জ এক হাজার টাকা রিসিট নিয়ে দিয়ে দিলাম , কিন্তু রশীদের গায়ে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের কোন নাম নেই। আর কেবিন ভাড়া ছয় শত পঞ্চাশ টাকা বিনা রশীদে রেখে দিল । আমি চারহাজার দুইশত ত্রিশ টাকারি ঔষধ বাইরের দোকান থেকে কিনে নিয়ে সরকারি হাসপাতালের বেডে শোয়ে থাকা আমার রোগীকে দিলাম। একটা প্যারাসিটামল ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার রোগীকে সরবরাহ করেনি। তাহলে প্রশ্ন হলো হাসপাতালে রোগীদের জন্য কি সরকার কোন ঔষধ ক্রয় করে না ? তাহলে কোটি কোটি টাকার ঔষধ যায় কোথায় ? কেবিন ভাড়ার বিনা রশীদে নেওয়া টাকাটা কি সরকারি কোষাগারে আদৌ জমা হবে? সরকারি হাসপাতাল কি শুধুই একটা বিল্ডিং আর কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা? এখানে কি কোন ইনভেশন কাজ করবে? এর শেষ কোথায় ? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় কি এসব জানেন ? না কি তিনি ও এর মধ্যে আছেন ? মাননীয় সংসদ সদস্য আধুনিক সদর হাসপাতাল, হবিগঞ্জ এর সেবার মান বাড়ানোর জন্য , এবং সাধারণ মানুষ যাতে বিনা মূল্যে হাসপাতাল এর ডিসপেনসারি থেকে ঔষধ পেতে পারে , ডাক্তার নার্স দের আচরণ ভাল করে সে ব্যাপার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সাথে হাসপাতালের স্টকে কি কি ঔষধ আছে, ওয়ার্ড গুলোতে রোগীকে দেওয়ার জন্য কি কি ঔষধ রাখা আছে তা চলমান হালফিল ইলেক্ট্রনিক বোর্ডের মাধ্যমে প্রদর্শণের ব্যবস্থা করা হবে কি না , করলে কতদিন সময় লাগবে তা আপনার মাধ্যমে জানতে চাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । বিনীত, মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার , ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা : সবুজবাগ, হবিগঞ্জ। মোবাইলঃ ০১৭১৭৮৪৭১৬৩ |